দেশে তৈরী করোনার টিকা বঙ্গভ্যাক্স ডেল্টাসহ বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের ১১টি ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকর বলে দাবি করেছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। এই টিকার এনিমেল (বানরের শরীরে) ট্রায়ালের প্রাথমিক ফলাফলে এ তথ্য জানা গেছে। আগামী বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) এই ট্রায়াল শেষ হবে।
সোমবার সকালে প্রতিষ্ঠানটির কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গত ১ আগস্ট থেকে বানরের ওপর শুরু হওয়া এ ট্রায়াল আগামী বৃহস্পতিবার শেষ হবে। এরপর আগামী সপ্তাহের দিকে ট্রায়ালের বিস্তারিত প্রতিবেদন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) কাছে হস্তান্তর করতে পারব বলে আশা করছি।
ড. মহিউদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসের ডেল্টাসহ ১১টি ভেরিয়েন্ট বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় ছিল। আমরা এ ১১টি ভেরিয়েন্টের সিকোয়েন্স অ্যানালাইসিস করে টিকার সিকোয়েন্স মিলিয়ে দেখেছি প্রতিটি ভেরিয়েন্টের ক্ষেত্রেই বঙ্গভ্যাক্স কার্যকর। যার প্রমাণ মিলেছে বানরের শরীরে পরীক্ষার ক্ষেত্রেও। প্রাথমিক ফলাফলে আমাদের টিকা বানরের শরীরে নিরাপদ এবং কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ভ্যাকসিনেটেড বানরের শরীরে করোনাভাইরাসের ডেল্টাসহ অন্যান্য ভেরিয়েন্ট প্রয়োগ করে চ্যালেঞ্জ স্টাডি করেছি। চূড়ান্ত ফলাফলে আমাদের টিকা ডেল্টাসহ অন্যান্য ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই উন্নত বিশ্ব করোনা মোকাবিলায় যে নতুন ভ্যাকসিনের কথা বলছে, আমরা মনে করি, সেই নতুন ভ্যাকসিনটি হতে পারে বঙ্গভ্যাক্স। কারণ এক বছর আগে যখন প্রথম ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছিল তখন করোনার এতো রূপ আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে বর্তমানে প্রচলিত বেশিরভাগ ভ্যাকসিন ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে খুব একটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না।
গ্লোব বায়োটেকের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বঙ্গভ্যাক্স ভ্যাকসিন বিশ্বকে এ করোনা সংকট থেকে উদ্ধার করবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহেও একইভাবে কাজ করবে। তাই আমরা যদি এ টিকা মানবদেহে পরীক্ষা শেষে বাজারে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে সারা বিশ্বে ডেল্টাসহ করোনার অন্যান্য ভেরিয়েন্টের যে মহামারি চলছে সেটা থেকে পরিত্রাণ মিলবে।
বঙ্গভ্যাক্স টিকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের টিকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর ১টি ডোজেই এনিমেল ট্রায়ালে কার্যকর অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। আশা করছি, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও একইভাবে ফলাফল পাওয়া যাবে। এটি +৪° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১ মাস এবং -২০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।
তিনি বলেন, এই টিকা সিন্থেটিক্যালি তৈরি হওয়ায় তা ভাইরাসমুক্ত এবং শতভাগ হালাল। আমরা যদি দ্রুত টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ করে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশবাসীর সেবায় বঙ্গভ্যাক্সকে উৎসর্গ করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্ব দরবারে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
কতটি বানরের শরীরে এ টিকার ট্রায়াল হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে এ কর্মকর্তা বলেন, শিগগিরই আমরা একটি প্রেস ব্রিফিং করব। সেখানে এ সংক্রান্ত সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
গত বছরের ২ জুলাই ওষুধ প্রস্তুতকারী গ্লোব ফার্মার সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক ‘বঙ্গভ্যাক্স’ টিকা তৈরির কাজ শুরুর কথা জানায়। সেই টিকা খরগোশ ও ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে ‘কার্যকর ও সম্পূর্ণ নিরাপদ’ প্রমাণিত হয়েছে বলেও তখন জানানো হয়েছিল।
সূত্র : ঢাকাটাইমস